ফোকাস নিউজ:: সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সিপিবি-বাসদের মেয়রপ্রার্থী আবু জাফর ২১ দফা উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। বুধবার বিকেলে নগরীর জিন্দাবাজারস্থ একটি হোটেলের হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে ২১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
ইশতেহারে আবু জাফর বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে আইনজীবী, শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নগর কাউন্সিল গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
নগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইশতেহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পার্কিং জোন গড়ে তোলা, রাস্তায় ডিভাইডার স্থাপন করা, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী অত্যাধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, হকারদের পুনর্বাসন সাপেক্ষে ফুটপাত পুনরুদ্ধার করে জনগণের চলাচল উপযোগী করে গড়ে তোলার যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। গণপরিবহন ব্যবস্থা চালুকরণ, অর্ধেক ভাড়ায় স্কুল-কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে।
এছাড়া বিশুদ্ধ পানির সংকট সমাধান করা হবে। আধুনিক পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট সার, বায়োগ্যাস ও বিদ্যুত উৎপাদন করে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা হবে। নগরীর অভ্যন্তরের ছড়া ও খালের পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন মোতাবেক খননের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ড্রেন ও খালে ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক পাঠাগার ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা হবে। বেকার যুবক-যুবতীদের জন্যে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এবং স্থানীয় কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কল-কারখানা গড়ে তোলার জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কমপক্ষে একটি আধুনিক ও মানসম্মত অডিটোরিয়াম সহ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্রমান্বয়ে একটি করে হল/মঞ্চ নির্মাণ করা হবে, যাতে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো স্বল্প ভাড়ায় তাদের নিয়মিত সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা করতে পারে। নগরীতে নি¤œ আয়ের মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদির জন্য কোনো কমিউনিটি সেন্টার বা হলরুম নির্মাণ করা হবে। নগরীর অভ্যন্তরে সুবিধাজনক কয়েকটি স্থানে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করা হবে এবং আবাসন সংকট নিরসনে কর্মজীবী নারী হোস্টেল নির্মাণ করা হবে।
এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে নারীদের জন্য গণশৌচাগার নির্মাণ করা হবে এবং নগরীকে নারী ও শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে। সিলেট নগরীকে পর্যটকবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন নগরীতে রূপান্তরের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে এবং এ শিল্পের প্রসারে প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুবিধার্থে যাথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিউনিটি চিকিৎসাকেন্দ্র চালু করা সময়ের দাবি, নির্বাচিত হলে জনগণের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে এ মেয়রপ্রার্থী বলেন।
তিনি আরও বলেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে ফ্রি ওয়াইফাই জোন চালু করা হবে। খাসজমি উদ্ধার করে নি¤œ আয়ের মানুষদের ও ভূমিহীনদের থাকার জন্যে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। দ্রুত নতুন গ্যাস সংযোগ চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আলোচনাক্রমে জনগণের এ সংকট মোকবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নগরীতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিক্রমে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। নগরীতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে, সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সিলেট নগরের অভ্যন্তরে মণিপুরি সম্প্রদায়সহ কয়েকটি ক্ষুদ্র ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে। তাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি রক্ষা ও বিকাশে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। বিনা বেতনে নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তানের জন্য লেখাপড়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
ইশতেহার ঘোষণার শুরুতে বাসদ সিলেট জেলার সদস্য প্রণব জ্যোতি পাল সাংবাদিকদের সাথে উপদেষ্টা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় মেয়র প্রার্থী আবু জাফরের সাথে ছিলেন সিপিবি সিলেট জেলার সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা হাবিবুল ইসলাম খোকা, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সিপিবি সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক এড. আনোয়ার হোসেন সুমন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব বাসদ জেলা সদস্য জুবায়ের আহমদ চৌধুরী সুমন, উপদেষ্টা ও সিপিবি নেতা ড. বীরেন্দ্র চন্দ্র দেব, সিপিবি সিলেট জেলার যুগ্ম সাধারন সম্পাদক খায়রুল হাছান, বাসদ নেতা রাহাত আহমদ, বাসদ সিলেট জেলার সদস্য প্রণব জ্যোতি পাল প্রমুখ।
Leave a Reply