ফোকাস ডেস্ক :: নিরাপদ সড়কের দাবিতে রোববার অষ্টম দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সড়কে পরিবহন শ্রমিক ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদেরও দেখা গেছে।
ইতোমধ্যে সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে গেলে কয়েক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থী, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জিগাতলা থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রোববারও রাজধানীর জিগাতলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। একটি মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা দুপুর পৌনে একটার দিকে জিগাতলায় অবস্থান নেন। এ সময় তারা নিরাপদ সড়ক, বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুরুতে পুলিশ তাদের ঘিরে ছিল। কিন্তু, শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পানির বোতল ছুড়তে থাকে। পুলিশ এক পর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এরপর শিক্ষার্থীরা আশপাশের বিভিন্ন গলিতে ছড়িয়ে পড়েন। বাকিরা সাইন্স ল্যাব হয়ে শাহবাগে ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে। পুলিশ বিভিন্ন গলির মুখে এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। কাউকে ভিড়তে দিচ্ছেন না।
জানা গেছে, নিপীড়ন বিরোধী ছাত্রসমাজের ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেন। সেই মানববন্ধন থেকে তারা মিছিল নিয়ে জিগাতলায় অবস্থান নেন।
ধানমন্ডি থানার ওসি আবদুল লতিফ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘একদল শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হয়। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
রামপুরায় যুবকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
রামপুরায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একদল যুবকের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সকাল থেকেই ওই সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করছিল স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইম্পেরিয়াল কলেজ, খিলগাঁও ওমেন্স স্কুল ও কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
দুপুর একটার দিকে একদল যুবক এসে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সময় সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। শিক্ষার্থীরাও হাতে লাঠি, কাঠ, বাঁশ নিয়ে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে দু’পক্ষে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পালটা ধাওয়া শুরু হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে যুবকরা পিছু হটলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
রামপুরা থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এখানে একটি গ্রুপ গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সড়কে অবস্থান নিয়েছে।’
শাহবাগের সড়কে শিক্ষার্থীরা, সতর্ক ছাত্রলীগ
শাহবাগেও নিরাপদ সড়কের দাবিতে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে শাহবাগ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক’ শিক্ষার্থী নিরাপদ সড়ক দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে অবস্থান নেন। সেখান থেকে তারা শাহবাগে এসে বসেন।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা জাতীয় যাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
দুপুর দেড়টার দিকে তারা সেখানে অবস্থান নেন। এ সময় তারা শেখ কামালের জন্মদিনের ব্যানার নিয়ে মিছিল করেন।
ফার্মগেটে উত্তেজনা
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের কাছের এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির একদল শিক্ষার্থী দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিছিল বের করে। ক্যাম্পাস থেকে মিছিলটি ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছিল।
চার রাস্তার মোড়ে আসার আগেই একদল যুবক মিছিলে হামলা করে। হামলাকারীদের মাথায় হেলমেট ও হাতে লাঠি ছিল। এ সময় মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌঁড়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। তখন হামলাকারীরা ইটপাটকেল ছুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের কাচ ভাংচুর করে চলে যায়।
পুলিশের শক্ত অবস্থানে শান্ত মিরপুর
গত কয়েক দিনের ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল মিরপুর রোববার অনেকটাই শান্ত। সকালে শিক্ষার্থীরা মিরপুর ১ এর গোল চত্বরে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
বর্তমানে মিরপুরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোত পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের একটি জলকামান ও দুটি সাঁজোয়া যান। এছাড়া বেলা ১১টার দিকে মিরপুর ১ এ যুবলীগ–ছাত্রলীগের শতাধিক কর্মীরা সতর্ক অবস্থান নেন।
অন্যদিকে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ২ নম্বরে যাওয়ার সড়কের মাথায় পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সেখানে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স ও বৈধ কাগজপত্র আছে কি না, তা পরীক্ষা করছে ট্রাফিক পুলিশ।
রাজধানীর মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এছাড়া মিরপুর শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, এগুলোর মূল ফটক বন্ধ। কোনো শিক্ষার্থীকে বাইরে বের হতে দেয়া হয়নি।
উত্তরায় শিক্ষার্থীদের লাইসেন্স চেক
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বনানী পুলিশ বক্সের কাছে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। তারা সড়কে চলাচলরত যানবাহনের কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন। ফলে এই সড়কের দুই পাশ দিয়ে যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।
সাইন্সল্যাবে সংবাদকর্মীদের মারধর
রাজধানীর সাইন্সল্যাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর দুইটার দিকে হেলমেটধারী একদল যুবক এ হামলা চালায়।
এতে বার্তাসংস্থা এপির ফটোসাংবাদিক এএম আহাদসহ বেশ কয়েকজন আহন হন। তাদের বর্তমানে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, সকাল থেকে নিরাপদ সড়ক দাবিতে চলমান অন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ ও ছবির জন্য সাইন্সল্যাবে অবস্থান নেন একদল সংবাদকর্মী। হঠাৎ করে দুপুরে একদল যুবক রড, লাঠি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে।
হামলাকারীদের মাথায় হেলমেট ও মুখ কাপড় দিয়ে বাধা দিল। এ সময় এপির ফটোসাংবাদিক এএম আহাদ গুরুতর আহত হন। সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার ও ঘটনার ছবি তুলতে গেলে হামলাকারীরা বাকিদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। এতে আরও কয়েকজন সামান্য আহত হন।
সংবাদকর্মীরা অভিযোগ করেন, হামলার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো ভূমিকা নেয়নি। আটক দূরে থাক হামলাকারীদের নিবৃত্ত করারও চেষ্টা করেনি।
এ বিষয়ে ডিএমপির রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘হামলাকারী কারা, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। হামলার সময় তথ্য দিলে তাদের আটক করা সম্ভব হতো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হামলা ঠেকাতে পুলিশের কোনো গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এছাড়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নেন। সেখানে তারা নিরাপদ সড়কের দাবি বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থী বাসচাপায় মারা যায়। পরদিন থেকে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এতে অচল হয়ে পড়ে রাজধানীর সব সড়ক।
বিভিন্ন এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে থাকে। লাইসেন্সবিহীন গাড়িগুলো তারা আটকে দেয়। আন্দোলনের মধ্য থেকে তারা সরকারের কাছে ৯টি দাবি জানায়।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টা হিসেবে শুক্রবার থেকে সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এতে রাজধানীসহ সারাদেশে সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
Leave a Reply